ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম ও সুবিধা সমূহ

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ব্র্যাক ব্যাংক অত্যন্ত বেশি জনপ্রিয়। মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে যে বিকাশ অ্যাপ্লিকেশনটি আমরা ব্যবহার করি সেই অ্যাপের একমাত্র মালিক ব্র্যাক ব্যাংক। আর আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা ব্রাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে এবং ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা সহ ইত্যাদি বিষয়ে জানতে হলে আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরে সঙ্গে থাকুন।

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড

বাংলাদেশের যে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো রয়েছে তার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। এটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশকে উন্নয়ন করার জন্য কাজ করছে। ব্র্যাক মূলত অত্যন্ত বড় একটি কোম্পানি। বাংলাদেশে তারা একটি অসাধারণ প্রাইভেট ব্যাংক তৈরি করে ফেলেছে। আর বলে দেওয়া ভালো ব্র্যাক হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিস্তারকৃত একটি সংস্থা।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দরিদ্র বিমোচনে এবং আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ব্র্যাক অত্যন্ত এগিয়ে। ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তারা কাজ করে দরিদ্র বিমোচনে এবং মানুষকে সঠিক সময় সঠিক সেবা প্রদানে। ব্র্যাক ব্যাংকে বর্তমান সময়ে পাওয়া যায় লোন, রাখা যায় টাকা এবং নিশ্চিন্তে।

এমনকি রয়েছে এখানে আরো বেশ কিছু সুবিধা যা মূলত আমরা পেয়ে যাব একমাত্র ব্র্যাক ব্যাংকে। আমরা নিচে আপনাদের সাথে আলোচনা করে রেখেছি ব্রাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সুবিধা সম্পর্কে। ওই অংশটুকু পড়ে নিবেন তাহলেই বুঝতে পারবেন বর্তমান সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক কতটা সুবিধাজনক। 

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

অনেকে ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে না জানার কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। মূলত কয়েকটি বিষয় জানা থাকলে খুব সহজে ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট করা যায়। ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট খুলার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন হবে এবং সেই সাথে অল্প পরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে।

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে মূলত আপনার ছবি দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের এবং ভোটার আইডি কার্ডের ছবি, নমিনি ব্যক্তির এনআইডি কার্ড এবং তার দুই কপি ছবি। ইউটিলিটি বিলের ছবি এবং প্রথম পত্র নিয়ে ৫০০ টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করতে হবে। তারপরে সঠিকভাবে ফ্রম পূরণ করে একটি ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করা যাবে।

ব্র্যাক ব্যাংকে একাউন্ট তৈরি করা শেষে তারা আপনাকে একটি ডেবিট কার্ড দিবে। এবং আপনাকে দেওয়া হবে বেশ কিছু কাগজপত্র। অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন আপনার হাতে চেকবুক। আপনি যে ধরনের অ্যাকাউন্ট তৈরি করবেন ঠিক সে ধরনের অ্যাকাউন্টের উপর ভিত্তি করে আপনি মূলত ডিপোজিট করতে পারবেন।

আপনি চাইলে ঠিক এই অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন অর্থাৎ বলতে গেলে আপনি যদি একদিন ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করেন সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল এপ্লিকেশন রয়েছে তাই খুবই সহজে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করা যায়। 

আপনি চাইলে গুগলের মধ্যে ব্রাক ব্যাংকে যে ওয়েবসাইটটি রয়েছে সে ওয়েবসাইটের সহায়তায় ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরির জন্য একটি ফরম পূরণ করতে পারেন। আর সেই সকল ডকুমেন্টগুলো জমা করুন আপনার কাছে যেগুলো সম্পর্কে আমি বলেছিলাম। এরপরে আপনি সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন এবং তারপরে আপনার নির্ধারিত ব্রাঞ্চ সিলেক্ট করুন, একাউন্টের ধরন সিলেক্ট করুন। এবং সকল ইনফরমেশন সঠিকভাবে পূরণ করার মাধ্যমে একটি একাউন্ট তৈরির জন্য আবেদন করুন।

আপনি যখন একটি একাউন্ট তৈরির জন্য আবেদন করবেন তখন ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার সঙ্গে কাস্টমার সার্ভিস থেকে যোগাযোগ করা হবে। তার জন্য আপনার মোবাইল ফোনে একটি otp যাবে যখন আপনি রেজিস্ট্রেশন করবেন। সঠিকভাবে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তাহলে খুবই সহজে আপনি ব্র্যাক ব্যাংক একটি একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন।

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয় নিজের একাউন্টে। ৫০০ টাকা আপনি তুলতে পারবেন না এটি আপনার ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্টে থেকে যাবে। আর মূলত এই টাকাটা আপনার ডিপোজিট হিসেবে গণ্য করা হবে। এছাড়া মূলত অন্য কোন ফি আপনাকে প্রদান করতে হবে না একটি ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে।

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে?

একটি ব্রাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরির জন্য আপনার কাছে দরকার হবে বেশ কিছু ডকুমেন্টের। এ সকল ডকুমেন্ট ব্যতীত আপনি একটি ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন না। আসুন নিচে সেই সকল ডকুমেন্টগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

  • আপনার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র একই সঙ্গে ফটোকপি। অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • যে ব্যক্তিকে নমিনি বানিয়েছেন তার দুই কপি ছবি পাসপোর্ট সাইজের এবং এনআইডি কার্ড ফটোকপি।
  • বাসার এড্রেস ভেরিফিকেশন করার জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি।
  • সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ডিপোজি করতে হবে তাই সঙ্গে ৫০০ টাকা নিয়ে আসবে।

উক্ত ডকুমেন্ট এবং ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে খুবই সহজে আপনি একটি ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন ঝামেলা ছাড়া। বর্তমান সময় ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্টের বহু সুবিধা রয়েছে যা উপভোগ করতে পারবে যে কেউ।

ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা

ব্রাক ব্যাংক একটি আস্তা যুক্ত বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান। এই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় রেখেছে অসাধারণ ভূমিকা। বর্তমান সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট সুবিধা রয়েছে অসংখ্য। একজন কাস্টমার যদি ব্র্যাক ব্যাংকে একটি একাউন্ট তৈরি করে তাহলে তার জন্য রয়েছে অসাধারণ এবং দুর্দান্ত মানের সুবিধা সমূহ। আর এই সকল সুবিধা সমূহ প্রতিটি কাস্টমার ভোগ করতে পারে।

যখন একজন কাস্টমার একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করবে ব্র্যাক ব্যাংকে তখনই সে কাস্টমারকে দুইটি কার্ড প্রদান করা হবে। একটি মাস্টার কার্ড এবং অন্যটি ডেবিট কার্ড। মাস্টার কার্ডের জন্য যে কেউ চাইলে আবেদন করতে পারবে এবং খুব সহজে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে একটি ডেবিট কার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। আর যদি আপনি মাস্টার কার্ডের জন্য আবেদন করেন তাহলে খুবই সহজে মাঝখান ঘাট পেয়ে যাবেন যদি আপনার একাউন্টে একটু ব্যালেন্স থাকে।

যাদের ট্রান্সলেশন অনেক বেশি হয়ে থাকে তারা মূলত দ্রুত সময়ের মধ্যে পেয়ে যেতে পারে মাস্টার কার্ড। যারা মূলত ট্রান্সলেশন করে না। অর্থাৎ এক দুই মাস ধরে একাউন্টটি ডিএক্টিভ তারাও পেতে পারে তার জন্য আবেদন করতে হবে তাহলে খুবই সহজে পেয়ে যাবে।

ব্র্যাক ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট সুবিধা

ব্র্যাক ব্যাংক সেভিং একাউন্টে রয়েছে অসাধারণ সুবিধা। একটি ব্র্যাক ব্যাংক সেভিং একাউন্ট তৈরি করার জন্য মাত্র ৫০০ টাকা ডিপোজিট করতে হয়। এবং তারপর আপনি আনলিমিটেড টাকা লেনদেন করতে পারবেন ব্র্যাক ব্যাংকের এই একাউন্টটিতে। আবার বর্তমান সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের রয়েছে সুইফট কোড। তাই যারা মূলত বাইরের দেশ থেকে টাকা লেনদেন করেন তারা চাইলে খুবই সহজে এই ব্যাংকে নিজের বৈদেশিক অর্থ লেনদেন করতে পারেন।

যারা মূলত ইউটিউব কিংবা ফেসবুকে কন্টেন ক্রিয়েশন করেন তাদের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক খুবই বেশি সুবিধাজনক। কারণ, জানা গেছে বর্তমান সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক দিয়ে থাকে সবচাইতে বেশি টাকার রেট। অন্যান্য ব্যাংক যেখানে দিয়ে থাকে 108 টাকা করে ডলার রেট সেখানে তারা একটুখানি বাড়িয়ে দেয়। আর যেহেতু আমরা অনলাইনে আয় করে থাকি তাই আমাদের এক টাকা যদি বেড়ে যায় প্রতি ডলারে তাহলে অবশ্যই ১,০০০ ডলারের জন্য আমরা পেয়ে যাব আরো বাড়তি এক হাজার টাকা।

তাই অবশ্যই আপনারা চাইলে যারা ফেসবুক ইন করেন কিংবা ইউটিউব ইন করেন বা ব্লগিং করেন এবং নিজের টাকা নিয়ে থাকেন বাইরের দেশ থেকে তারা খুবই সহজে ব্রাক ব্যাংক ব্যবহার করতে পারেন সেভিং একাউন্ট। তবে বেশি টাকা লেনদেন করলে অবশ্যই আপনার দরকার হবে ট্যাক্স দেওয়ার। এবং ব্র্যাক ব্যাংকের সহায়তায় খুবই সহজে দেশের উপকারের জন্য ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন।

Also Read:

ব্র্যাক ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট সুবিধা 

ব্র্যাক ব্যাংকে বর্তমান সময়ে স্টুডেন্টরা খুবই সহজে চাইলে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারে। স্টুডেন্টরা অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে খুবই সহজে তাদের জন্য রয়েছে একটি স্টুডেন্ট একাউন্ট। এবং তার সাথে সাথে তারা পেয়ে যাবে আগামী পার্সোনাল লোন, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। 

ধরুন আপনি একজন স্টুডেন্ট এবং আপনার টাকার প্রয়োজন তাহলে খুবই সহজে আপনি চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের এই একাউন্টটি থেকে নিয়ে নিতে পারেন স্টুডেন্ট আগামী লোন কিংবা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড যা পরবর্তীতে শোধ করে দিতে পারেন। 

তবে এর জন্য আপনাকে সরাসরি ব্রাঞ্চ এ গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং কি কি ডকুমেন্ট লাগবে তারা সরাসরি আপনাকে বলে দিবে। অতঃপর সেই সকল ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে জোগাড় করে তারপরে খুবই সহজে আপনি চাইলে স্টুডেন্ট আগামী লোন কিংবা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

সর্বশেষঃ ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কিত আর্টিকেলটি নিশ্চই আপনাদের অনেক উপকারে এসেছে। সেই সাথে ব্র্যাক ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড এর সুবিধা সমূহ সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ ধরনের প্রয়োজনীয় আর্টিকেল নিয়মিত পেতে চাইলে আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ।।