অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খুবি বিশ্বস্ত একটি ব্যাংক হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। যার কারণে অনেকে অগ্রণী ব্যাংক ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকে অগ্রণী ব্যাংকে প্রতিনিয়ত নতুন একাউন্ট খুলতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলা নিয়ে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকায় প্রাথমিক অবস্থায় অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। এসব ঝামেলায় যেন পড়তে না হয় তার জন্য অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি।

যা আজকের এই আর্টিকেলটির সাহায্যে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে এবং একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এ সকল বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি ধৈর্য্য ধরে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড

অগ্রণী ব্যাংক বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের একটি জাতীয়তাকরণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত ব্যাংক। এই ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য রয়েছে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা পরিষদ যেখানে রয়েছে একজন প্রধান চেয়ারম্যান। ২০২২ সালে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ডঃ জায়েদ বকত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে জনাব মোরশেদ কোভিদ নিযুক্ত ছিলেন। 

২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিং সুবিধা চালু করেছিল। এই ব্যাংকটি বাংলাদেশের বেশ কিছু এলাকায় বর্তমান সময়ে নিজের শাখা বিস্তার লাভ করেছে। অধিকাংশ গ্রাম কিংবা শহর অঞ্চলে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড শাখা স্থাপিত রয়েছে। 

অগ্রণী ব্যাংক কি সরকারি? 

হ্যাঁ, অবশ্যই অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশ সরকার দ্বারা পরিচালিত। বর্তমান সময়ে এই ব্যাংকটি বাংলাদেশ সরকারের দশটি মানুষের দ্বারা পরিচালিত একটি পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যক্তির সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং বর্তমান সময়ে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। 

অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

আপনি যদি একটি অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে হবে। আর বর্তমান সময়ে অগ্রণী ব্যাংকে রয়েছে কয়েক প্রকারের একাউন্ট খোলার ধরন। প্রত্যেক ধরনের একাউন্ট খুলতে কিছু আলাদা আলাদা ডকুমেন্টের দরকার হয়। প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে আপনাকে বিশদভাবে জানতে হবে, তা না হলে আপনি সঠিকভাবে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন না। 

অগ্রণী ব্যাংকের কয়েক ধরনের একাউন্টের মধ্যে রয়েছে –

  • সেভিং একাউন্ট
  • স্টুডেন্ট একাউন্ট

সেভিং একাউন্ট

বর্তমান সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেই অ্যাকাউন্ট সেটি হচ্ছে সেভিং একাউন্ট। যারা মূলত নিজের টাকা পয়সা সেভিং করতে চাচ্ছেন তারা চাইলে খুবই সহজে বেশ কিছু কাগজপত্র সহায়তায় অগ্রণী ব্যাংকের একটি সেভিং অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারেন।

অগ্রণী ব্যাংকে সেভিং একাউন্ট তৈরির নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে কাগজপত্র নিয়ে আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে। এরপর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো জমা দিতে হবে। একাউন্ট খোলার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে তা একটু নিচে পেয়ে যাবেন।

স্টুডেন্ট একাউন্ট

অগ্রণী ব্যাংক স্টুডেন্টদের জন্য স্টুডেন্ট একাউন্টে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। যা চাইলে যেকোন সময় অগ্রণী ব্যাংকের স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলা যায়। একটি সেভিং একাউন্ট তৈরিতে যে সকল ডকুমেন্টগুলো আপনার প্রয়োজন হবে ঠিক সে রকম একি ধরণের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। 

তবে কোন স্টুডেন্টের বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে তাকে পিতা-মাতা কিংবা পূর্ণ বয়স্ক অভিভাবকের কাগজপত্র জমা দিয়ে একাউন্ট খুলতে হবে।

অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা লাগে?

অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ৫,০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত আপনার একাউন্টে ডিপোজিট করতে হয়। যতদিন পর্যন্ত আপনার অ্যাকাউন্টটি কার্যকর থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই টাকা আপনার অ্যাকাউন্ট এর মধ্যে থাকবে। সুতরাং এই টাকা আপনি তুলতে পারবেন না তবে এটা আপনার একটি জমানত হিসেবে থাকবে। এছাড়া আপনার কোন ধরনের অর্থ, অর্থাৎ একাউন্ট খোলার জন্য বিশেষ কোনো টাকা-পয়সা দেয়ার দরকার নেই। 

অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে? 

বর্তমান সময়ে একটি অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে বেশ কিছু ডকুমেন্ট এর দরকার রয়েছে যেগুলো ব্যতীত আপনি কিংবা যে কেউ একটি অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ব্যর্থ হবে। অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে তা নিচে দেয়া হল –

  • ভোটার আইডি কার্ড ফটোকপি।
  • শিক্ষার্থী হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ড এবং প্রত্যয়ন পত্র।
  • বাবা-মায়ের ভোটার আইডি কার্ড।
  • পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
  • নমিনি ব্যক্তি এবং তার পাসপোর্ট সাইজের দুইটি ছবি এবং তার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • যাদের আইডি কার্ড নেই তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে একাউন্ট তৈরি করতে পারেন।

উক্ত ডকুমেন্টগুলো যদি আপনার নিকট থাকে তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনি একটি অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবেন।

অগ্রণী ব্যাংক অনলাইন

বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকিং ব্যবস্থা বর্তমানে অনলাইন নির্ভর হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংকের পূর্ণ অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যা বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংক অনলাইন সেবা খুব সহজে পাওয়া যাচ্ছে। অগ্রণী ব্যাংক স্মার্ট এপ্লিকেশন, যা গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে।

এই অ্যাপ্লিকেশনটি ইন্সটল করে খুবই সহজে আপনার মোবাইলে আপনার মোবাইল নম্বর এবং অন্যান্য যাবতীয় ইনফরমেশন দিয়ে আপনার একটি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। অতপর সেখানে আপনার ব্যাংক একাউন্টটি লিংক করে নিতে পারবেন। এরপর আপনার অগ্রণী ব্যাংকের লেনদেন অনলাইনে করতে পারবেন।

অগ্রণী ব্যাংক এপস

অগ্রণী ব্যাংক একটি অ্যাপ্লিকেশন লঞ্চ করেছে যার নাম রাখা হয়েছে অগ্রণী স্মার্ট ব্যাংকিং এপস্। এই অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি যুক্ত করে নিলে আপনি এই অ্যাপ্লিকেশনের সহায়তায় লেনদেন করতে পারেন। 

Also Read:

অগ্রণী ব্যাংক সুপার সেভিং একাউন্ট

অগ্রণী ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক সুপার সেভিং একাউন্ট। একটি সুপার সেভিং একাউন্ট অগ্রণী ব্যাংকে খুলে ফেললে আপনি খুবই সহজে ইন্টারেস্ট পেতে থাকবেন। মিনিমাম ২০ হাজার টাকা এই একাউন্টের মধ্যে ডিপোজিট করে রাখতে হবে। যাদের একাউন্টে ২০ হাজার টাকার উপরে থাকবে অর্থাৎ ২১ হাজার টাকা থাকবে তারা ২.৭৫% হারে মুনাফা অর্জন করবে। 

চক্রবৃদ্ধি মুনাফা সম্পূর্ণ হারাম তাই আমরা অবশ্যই কখনোই আপনাকে সাজেশন দিব না চক্রবৃদ্ধি হারে ঘুষ খেতে। তবে আপনি কতটুকু ইসলাম মানেন কিংবা নিজে কতটুকু ইসলামিক জ্ঞান রাখেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করে। একইভাবে যারা এই একাউন্ট এর মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার উপরে রাখবে তারা ৩.৭৫ শতাংশ হারে মুনাফা অর্জন করবে। 

এ ধরনের অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য দরকার হবে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনি ব্যক্তির এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। এরপর দরকার হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের একটি ফটোকপি।

সর্বশেষঃ আর্টিকেলটির সাহায্যে নিশ্চই অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা পেয়েছেন। সেই সাথে অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে হলে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। ধন্যবাদ।।