জীবনানন্দ দাশের: বনলতা সেন কবিতা | Best Poem Ever 1/1

জীবনানন্দ দাশ বাংলার এক সুনাম অর্জনকারী বিখ্যাত কবি। যার কবিতা, উপন্যাস বাংলার মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে। আমরা যখন জীবনানন্দ দাশের কবিতা পাঠ করি তখন অসাধারণ কবিতার ছন্দে হারিয়ে যায় কোন এক অজানায়। আজকে আলোচনা করা হবে জীবনানন্দ দাশের যে সকল অধারণ কবিতা নিয়ে। আশা করছি শেয়ার করা কবিতাগুলো আপনাদের অসংখ্য ভালো লাগবে যা প্রতিনিয়ত পাঠ করার ইচ্ছা জাগাবে।

আরও পড়ুনঃ

বনলতা সেন কবিতা জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয় একটি অসাধারণ কবিতা। এই কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের তৃতীয় প্রকাশিত বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কাব্যগ্রন্থে অন্তর্গত কবিতাগুলো খুবি অসাধারণ ছন্দের মন ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা।

জীবনানন্দ দাশ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জীবনানন্দ দাশ ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে বাংলাদেশের বরিশাল শহরের অন্তর্ভুক্ত এলাকা। তার পিতার নাম সত্যানন্দ দাশগুপ্ত এবং মায়ের নাম কুসুমকুমারী দাশ। উল্লেখ্য যে কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সে সময়ের একজন অসাধারণ মহিলা কবি।  কুসুমকুমারী দাশের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্ত যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এখন আলোচনায় আসি জীবনানন্দ দাশের শিক্ষাজীবন নিয়ে। জীবনানন্দ দাশ ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন বা এসএসসি পাস করেন এবং এর দুই বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট বা এইচএসসিতে পুনরায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ১৯১৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্সে বিএ ডিগ্রি লাভ এবং ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে দ্বিতীয় মেধাতালিকায় এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

তিনি ডিগ্রি লাভের পর থেকে অধ্যাপনা কাজ শুরু করেন। এর পাশাপাশি তার সাহিত্যচর্চা অধিকহারে বৃদ্ধি পায়। জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয়তা পাওয়া কাব্যগ্রন্থগুলো মধ্যে হচ্ছে বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, ঝরাপালক ইত্যাদি।

তিনি ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন। তাকে আহত অবস্থায় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা শুনে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার অবস্থা জটিল হয় এবং এর সাথে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

বনলতা সেন কবিতা

বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত এক জনপ্রিয় কবিতা হচ্ছে বনলতা সেন কবিতা। বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে। এটি জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ। নিচে বনলতা সেন কবিতাটি দেওয়া হয়েছে।

কবিতাঃ বনলতা সেন
কবিঃ জীবনানন্দ দাশ
কাব্যগ্রন্থঃ বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন ।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী – ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

বনলতা সেন কবিতা জীবনানন্দ দাশ | Bonolota Sen Kobita
বনলতা সেন কবিতা জীবনানন্দ দাশ | Bonolota Sen Kobita

জীবনানন্দ দাশের কবিতা

জীবনানন্দ দাশের অসংখ্য জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। প্রত্যেক কবিতায় অসাধারণ ছন্দের আবির্ভাব ফুঠে উঠেছে। যা পাঠ করলে অসাধারণ ছন্দের মাঝে হারিয়ে যেতে মন চাই। আমরা সাধারণত এমন ধরনের ছন্দের কবিতা খুঁজে থাকি যা আমরা ছন্দের মুগ্ধতায় হারিয়ে যেতে পারি। এ ধরনের কবিতা আমরা জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থে খুঁজে পেয়ে থাকি।

তার মধ্য থেকে আমরা কিছু সংখ্যক কবিতা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আশা করছি শেয়ার করা কবিতাগুলো আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।

কবিতাঃ বাংলার মুখ
কবিঃ জীবনানন্দ দাশ

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।